Hello wo২০১৯ সালের দিকে হঠাৎ একটা কল আসে, স্যার, আমি চিগম ত্রিপুরা, বান্দরবানের আলিকদম বাড়ি।rld!

Hello wo২০১৯ সালের দিকে হঠাৎ একটা কল আসে, স্যার, আমি চিগম ত্রিপুরা, বান্দরবানের আলিকদম বাড়ি।rld!

Welcome to Wবললাম, কী সাহায্য করতে পারি?

জানাল, সে কালেমা পড়তে চায়, মুসলিম হতে চায়।

আমি তাকে তখনই মোবাইলে কালেমা পড়তে বলি। কিন্তু সে বলল, আমার সামনে এসে কালেমা পড়বে। আমি বুঝালাম। তবুও তার একই কথা, সামনে এসে কালেমা পড়বে।

কিছুদিন পর সেখানকার এক সাথী আবদুর রহীম ত্রিপুরার কাছে খোঁজ নিই। সে কিছুই জানাতে পারে না। এরপর অনেকদিন আর কোনো খোঁজ-খবর নেই।

২০২২ সালের ২৫ রমাযানের দিকে আবদুর রহীম ত্রিপুরা ফোনে জানায়, তার দূরসম্পর্কের এক আত্মীয় খুব অসুস্থ। আমার কাছে আসতে চায়Ñ নিয়ে আসবে কি না। আমি তাকে আনতে বলি।

রোগীর নাম চিগম ত্রিপুরা। রাতের বেলা ভুলক্রমে আগাছা মারার ঔষধ খেয়ে ফেলেছে। মালুমঘাট ‘খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে’ ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু অল্প সময়ে তাদের সঞ্চিত ২০ হাজার টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় হাসপাতাল থেকেও ডিসচার্জ করে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়। এরপর আসে আমাদের হাসপাতালে। চিকিৎসা দিই। ব্যথা কমে। কিন্তু বিষক্রিয়ায় শ্বাসনালী অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ১০ লিটার অক্সিজেন দিলে ভালো থাকে। না দিলেই আবার অবস্থা খারাপের দিকে যায়।

এরই মধ্যে চলে আসে ঈদুল ফিতর। আমি ঈদ করতে বগুড়ায় চলে যাই। ওদিকে বারবার চিগম ত্রিপুরা আমার খোঁজ নেয়, কখন আমি হাসপাতালে ফিরব।

ঈদের পর আমি ফিরি। সে তার স্ত্রী ও ছেলে প্রেরিত ত্রিপুরাকে নিয়ে অনেক কষ্টে আমার চেম্বারে আসে। প্রথমেই বলে, স্যার, আমি তিন বছর আগে একদিন আপনাকে কল করেছিলাম, মুসলমান হওয়ার জন্য। তখন বরিশালে ছিলাম।

আমার মনে পড়ে গেল। বললাম, হাঁ তোমাকে মোবাইলেই কালেমা পড়ে নিতে বলেছিলাম।

সে বলল, জি স্যার। এখন আমার একটা শেষ কথা শুনতে হবে।

বললাম, ঠিক আছে বলো।

সে বলে, স্যার, আমি মনে হয় আর বাঁচব না। এই জীবন তো শেষ হয়েই যাবে। আমি এই অন্তিম মুহূর্তে একমাত্র সত্য ধর্ম ইসলামের সাক্ষ্য দিয়ে, কালেমা পড়ে মরতে চাই।

আমি তাকে বললাম, তুমি ভালো চিকিৎসার আশায় মুসলিম হতে চাইলে প্রয়োজন নেই। যত টাকা খরচ হয় হোক, তুমি খ্রিষ্টান হলেও তোমার চিকিৎসা আমি চালিয়ে যাব। যদি খাঁটি মনে বানুনিয়া বাগরাহা (সৃষ্টিকর্তা) আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য মুসলিম হতে চাও, তাহলে কালেমা পড়ে নাও।

সে কালেমা পড়ে। তার সন্তান প্রেরিত ত্রিপুরাও (২০ বছর) কালেমা পড়ে। তাদের দেখাদেখি তার স্ত্রীও মৌখিকভাবে কালেমা পড়ে নেয়।

কালেমা পড়ার পর এই মুমূর্ষু চিগম ত্রিপুরার নাম দেওয়া হয়, আলী ত্রিপুরা। তার চেহারায় প্রশান্তির এক ছাপ নেমে আসে। তার কোনো অর্গানে সমস্যা নেই। লাংস টিস্যু ডেমেজ হয়েছে শুধু। সে নিজে নিজেই অক্সিজেন এডজাস্ট করে নিতে পারে। তবে মাঝে মাঝে বলে ওঠে, স্যার, আমি আর বাঁচব না। এভাবে আর কতদিন অক্সিজেন দিয়ে রাখবেন?

শেষের দিকে মাঝে মাঝেই আমাকে ডেকে পাঠাত এবং একটা একটা ওসিয়ত করত :

* আমার মৃত্যুর সময় যেন পাশে কালেমা পড়া হয়। (সে ইসলামের কোনো নিয়ম কানুন শেখা ও পালন করার সুযোগ পায়নি)

* আমার মৃত্যুর পর যেন আমাকে ইসলামী নিয়মে সৎকার করা হয়।

* আমার কবর যেন খ্রিষ্টান পাড়ায় না হয়। মুসলিম পাড়ায় হয়।

* মৃত্যুর পর আমার ছোট সন্তানগুলোকে একটু দেখে রাখবেন।

আস্তে আস্তে অবস্থা বেশ খারাপের দিকে যাচ্ছিল। একদিন আমি কাছে গিয়ে বলি, আলী, কালেমা পড়ো।

সে স্পষ্টভাবে কালেমা পড়তে থাকে। কিন্তু মুখে অক্সিজেনের মাস্ক। ভালো করে বোঝা যায় না। দেখতে দেখতে বিদায়ের সময় একেবারে নিকটে চলে আসে। একপর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। পাশে তার বাবা, ছেলে, স্ত্রী, আমি, আমাদের মেডিকেল অফিসার এবং হাফেজ মাওলানা নজরুল ইসলাম সাহেব। আমরা তার পাশে বসে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করতে থাকি। হুঁশ ফিরতেই বলা শুরু করল, ‘আল্লাহ! আল্লাহ! আল্লাহ!’

আমি ডাক দেই, আলী!

সে চোখ মেলে তাকায়।

বলি, কালেমা পড়।

সে কালেমা পড়ে। কিছুক্ষণ পর আবার অজ্ঞান হয়ে যায়। আবারো জ্ঞান ফিরতেই ‘আল্লাহ আল্লাহ’ জপতে থাকে। আমি আবারো কালেমা পড়তে বলি। সে আবারো স্পষ্ট করে কালেমা পড়ে।

এভাবে বারবার জ্ঞান হারায়, আবার জ্ঞান ফিরে পায়। জ্ঞান ফিরলেই ‘আল্লাহ আল্লাহ’ জপতে থাকে। এভাবে আল্লাহর নাম জপতে জপতেই কয়দিনে আমার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা নও মুসলিম আলী ত্রিপুরা আমাদের থেকে বিদায় নেয়।

তার ওসিয়ত অনুযায়ী তার গোসল ও কাফন আমাদের এখানেই করা হয়। আলিকদম ১১ কি. মি. মুসলিমপাড়ায়  তার জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই তাকে দাফন করা হয়।

তার ওসিয়ত অনুযায়ী, তার দুই ছেলে এখন আমার কাছে। এরই মধ্যে প্রেরিত ত্রিপুরা (মাসুম ত্রিপুরা) তিন চিল্লা দিয়ে এসে আমাদের হাসপাতালে চাকরিতে যোগ দিয়েছে। আমাদের চোখের সামনে আলী ত্রিপুরার এমন মৃত্যু দেখে একবার অশ্রুসজল হই, আরেকবার ঈর্ষান্বিত হই।

আহ! কী পবিত্র মৃত্যু তার! কী সুন্দর বিদায় তার!

আমাদেরও যেন নসীব হয় এমন পবিত্র মৃত্যু! 

প্রসঙ্গসমূহ:

ঈমান-আকাইদ

দ্বীনিয়াত

আদব-শিষ্টাচার


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *