আউলিয়ায়ে কেরামের ওসিলায় আল্লাহর রহমত

আউলিয়ায়ে কেরামের ওসিলায় আল্লাহর রহমত

ভূমিকা:- নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি ওয়া নুসাল্লিমু আলা রাসুলিহিল কারীম আম্মাবা’দ। মহান আল্লাহ তা’য়ালা মানব জাতীর হেদায়াতের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। আর আমাদের নবী রাহমাতুল্লীল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে নবীগণের আগমনের ধারা সমাপ্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে আউলিয়াগণের মাধ্যমে ইসলামের শান্তির বাণী বিশ্বের আনাছে কানাছে পৌছিয়ে দিয়েছেন। এ ভারতীয় উপমহাদেশসহ প্রায় সমগ্র বিশ্বে মহান আউলিয়ায়ে কেরামগণের মাধ্যমেই ইসলাম প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে। ঐতিহ্যবাহী মশুরীখোলা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ ত্রয়োদশ শতাব্দীর মহান মোজাদ্দিদ হযরত ক্বেবলাহ শাহ আহসানুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হির প্রতিষ্টিত উরস মোবারকের ১৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আউলিয়া কেরামগণের পরিচিতি,অবস্থা এবং মর্যাদা আলোচনা করার লক্ষেই এই নিবন্ধের অবতারনা।

১.আউলিয়াগণের পরিচয়:-শাব্দিক অর্থে- “আউলিয়া” (اَلْأَوْلِيَاء) শব্দটি বহুবচন। এর একবচন হলো “ওলি” (وليّ), অর্থ-অভিবাবক, বন্ধু, সাহায্যকারী, মালিক ইত্যাদি। আর ওয়ালিয়্যুল্লাহ (ولي الله) অর্থ-আল্লাহর প্রিয় বান্দা (আল-মু‘জামুল ওয়াফী ১১৫৬ পৃ:)। আল্লামা ইউসুফ আন-নাবহানী রহ. উল্লেখ করেন, ওলী শব্দটির দুটি অর্থ প্রথমত- الوليশব্দটি اسم الفاعل المبالغة-এর সীগাহ, অর্থ- من تواليت طاعاته من غير تخلل معصية ( অর্থাৎ-যে কোন প্রকার অবাধ্যতা ছাড়াই তাঁর অনুগত্য করে ) ,দ্বিতীয়ত শব্দটি اسم المفعول এর ওজনে ব্যবহত অর্থ- الذي يتولى الحق سبحانه حفظه وحراسته على التوالي عن كل أنواع المعاصي(অর্থাৎ যাকে স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা সকল প্রকার গুনাহ থেকে ফিরিয়ে রেখে সংরক্ষণ করে অভিভাকত্ব করেন ) (জামিউ কারামাতিল আউলিয়া ১ম খন্ড ১৫-১৬পৃ:)।
ওলীর সংজ্ঞায় আল্লামা সাদ উদ্দীন তাফতাযানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন-
والولي هو العارف باالله تعالى وصفاته، حسب مايمكن المواظب على الطاعات، المجتنب عن المعاصى، المعرض عن الانهاك فى اللذات والشهوات-

অর্থাৎ:-ওলী ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যিনি সাম্ভব্যসীমা পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা এবং তাঁর গুনাবলী সম্পর্কে জ্ঞান রূপে সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকেন, সকল প্রকার পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করেন এবং সকল প্রকার লালসা ও মনের কুপ্রবৃত্তির অনুসরন থেকে হতভম্ব না হয়ে বিরত থাকেন। (শরহুল আক্বায়িদি নাসাফী-পৃ:১৪৪-১৪৫, আলী ইবনে মুহাম্মাদ শরীফ জুরজানী রা. এর কিতাবুত তা’রীফাত দ্র:)

খ.আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
وَقَالَ الْمُتَكَلِّمُونَ: وَلِيُّ اللَّه مَنْ يَكُونُ آتِيًا بِالِاعْتِقَادِ الصَّحِيحِ الْمَبْنِيِّ عَلَى الدَّلِيلِ وَيَكُونُ آتِيًا بِالْأَعْمَالِ الصَّالِحَةِ عَلَى وَفْقِ مَا وَرَدَتْ بِهِ الشَّرِيعَةُ، فَهَذَا كَلَامٌ مُخْتَصَرٌ فِي تَفْسِيرِ الْوَلِيِّ.

অর্থাৎ:-ওলী হচ্ছেন,যিনি কোরআন সুন্নাহর দলীলের ভিত্তীতে বিশুদ্ধ আক্বিদা (আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা) পোষন করেন এবং শরীয়তের বিধান মোতাবেক সৎকর্ম পালন করেন। (তাফসীরে কাবীর সূরা ইউনুছ-২৬ নং আয়াতের তাফসীর দ্র:)

২. আউলিয়াগণের প্রকারভেদ- আল্লামা ইউসুফ নাবহানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ,ইমাম মহিউদ্দিন আরাবী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এর থেকে ওলীগণের বিভিন্ন স্তর উল্লেখ করেন , যেমন-
১. আক্বতাব ২. আয়িম্মা ৩. আওতাদ ৪.আবদাল ৫.নুকাবা ৬. নুজাবা ৭.হাওয়ারিয়্যূন ৮.রাদ্বাবিয়্যুন ৯.খাতাম ১০.হযরত আদম আ. এর ক্বলবের সাথে সম্পৃক্ত ১১. হযরত নূহ আ. এর ক্বলবের সাথে সম্পৃক্ত ১২. হযরত ইব্রাহিম আ. এর ক্বলবের সাথে সম্পৃক্ত ১৩.হযরত জিব্রাঈল আ. এর ক্বলবের সাথে সম্পৃক্ত ১৪. হযরত মিকাঈল আ. এর ক্বলবের সাথে সম্পৃক্ত ১৫. হযরত ই¯্রাফীল আ. এর ক্বলবের সাথে সম্পৃক্ত ১৬. হযরত দাউদ আ. এর ক্বলবের সাথে সম্পৃক্ত ১৭. রিজালুল গাইব ১৮. আল্লাহর শক্তির প্রকাশক ওলী। (জামিউ কারামাতিল আউলিয়া ১ম খন্ড ৭২-৮২পৃঃ)

৩. আউলিয়াগণের বাতেনী প্রশাসন ব্যবস্থা:- আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলায়াহি ওয়া সাল্লামের ধর্মের সত্যতার প্রমান আজও বিদ্যমান রেখেছেন এবং আউলিয়ায়ে কেরামগণকে উহা প্রকাশ পাওয়ার উপকরন করে দিয়েছেন। যাহাতে সর্বদা আল্লাহ তা‘য়ালার নিদর্শন সমূহ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সত্যতার প্রমান কায়েম থাকে। এই শ্রেণীর বিশিষ্ট ওলীগণকে দুনিয়ার মালিক ও শাসক বানিয়ে দিয়েছেন। এমনকি তাঁরা শুধু আল্লাহ তা‘য়ালার আদেশাবলী পালনের জন্য সম্পুর্ণরুপে ওয়াকফ এবং উৎসর্গিত হয়ে রয়েছেন। নফসের পায়রবী করার পথ তাঁদের জন্য সম্পুর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে তাদের মোবারক কদমের বদৌলতে আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। তাঁদের স্বচ্ছ এবং পবিত্র অবস্থার বরকতে যমিন হতে উদ্ভিদ সমূহ উৎপন্ন হয়। তাঁদের দোয়া ও তাওয়াজ্জুহের কারণে মুসলমানগণ কাফেরদের উপর জয়লাভ করে।

প্রত্যেক যুগে ইহাদের সংখ্যা চার হাজার থাকেন (তাঁদেরকে ওলী (ولي) বলা হয়)। ইহারা সর্বসাধারণের চোখ হতে অদৃশ্য থাকেন। অর্থাৎ লোকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে তাঁদের বাহ্যিক রূপ দেখতে পেলেও তাঁদের প্রকৃত রূপ ও অবস্থা দেখতে পায় না। তাঁরা একে অন্যকে চিনেন না। তাঁরা নিজেদের ভালমন্দ অবস্থারও খবর রাখেন না। সকল অবস্থায় তাঁরা নিজের নিকট এবং সর্বসাধারণের নিকট অদৃশ্য ও অজ্ঞাত থাকেন। এ সম্বন্ধে বহু হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। আউলিয়া কেরামগণের বাণী হতেও এর সাক্ষ পাওয়া যায়। আবার যাদের হাতে দুনিয়ার শাসন ও শৃঙ্খলা বিধানের ভার ন্যস্ত করা হয়েছে এবং যারা আল্লাহ তা‘য়ালার সেনানায়ক তাঁদের সংখ্যা তিনশত। তাঁদেরকে ‘আখিয়ার’ (اخيار) বলা হয়। তাঁরা ব্যতিত আরও চল্লিশজন রয়েছেন, তাঁরা ‘আবদাল’ (ابدال ) নামে অভিহিত। এতদ্ভিন্ন আরও সাতজন আছেন, তাঁদের উপাধি ‘আবরার’ (ابرار)। আরও চারজন আছেন, তাঁদেও নাম ‘আওতাদ (اوتاد )। আরও তিনজন আছেন, তাঁদের উপাধি ‘নাক্বীব’ (نقيب )। আর সকলের উপর একজন নিযুক্ত আছেন তাঁর উপাধি ‘ক্বুতুব’ (قطب ) এবং ‘গাওস’ (غوث ) । এরা সকলেই একে অন্যকে চিনেন এবং শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একে অন্যেও আদেশ ও অনুমতির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকেন। ইহাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের অভিমত। এই শ্রেণী বিভাগ ও শৃংখলা বিধান সকলেই সত্য বলে বিশ্বাস করেন। ( কাশফুল মাহযুব, দাতা গঞ্জেবখশ রা. রচিত)

৪. গাউসুল আযমের অর্থ কি? ও শেষ নবীর উম্মতের মধ্যে কতজন গাউসুল আযম হবেন? :– গাউসুল আযম অর্থ হলো- মহান সাহার্য্যকারী। আউলিয়ায়ে কেরামের প্রশাসন ব্যবস্থায় যিনি সর্বোচ্চ পদে ( প্রেসিডেন্ট) থাকেন তার পদবী হলো গাউস অথবা ক্বুতুব। উক্ত গাউসের মধ্যে যারা সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী হন তাদেরকে গাউসুল আযম বলা হয়। যা ওলীগণকে মহান আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত উপাধী।
মক্কায়ে মোর্কারামার বিশ্ববরেণ্য আলেম হযরত মোল্লা আলী ক্বারী র. লিখেন যে, এই উম্মতের মধ্যে তিনজন গাউসুল আযম হবেন। ১.সাহাবীয়ে রাসূল হযরত ইমাম হাসান রা. ২. বড়পীর আব্দুল ক্বাদের জিলানী রা. ও ৩. ইমাম মাহদী আ. (নুযহাতুল খাতিরিল ফাতির ফি মানাক্বিবিস সাইয়্যেদ শরীফ আব্দুল কাদের)

৫.আউলিয়াগণকে চিনার উপায়:- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-
عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا أَنه قَالَ قيل يَا رَسُول الله من أَوْلِيَاء الله قَالَ الَّذين إِذا رُأُوْا ذُكرَ اللهُ-
অর্থাৎ:-প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে ওলীগণের নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো , তিনি বললেন-যাদেরকে দেখলে মহান আল্লাহকে স্মরন হয় তাঁরাই হলো ওলী। ( নাওয়াদিরুল উসূল, ইমাম হাকিম তিরমিজী)

৬. পবিত্র ক্বোরআনের আলোকে ওলীগণের মর্যাদা– পবিত্র ক্বোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ (৬২) الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ (৬৩) لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (৬৪)
অর্থাৎ:-শুনে নাও ! নিশ্চয় আল্লাহর ওলীগণের না কোন ভয় আছে, না কোন দুঃখ (৬২) ঐ সব লোক যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং খোদাভীতি অবলম্বন করে (৬৩) তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালে, আল্লাহর বাণীসমূহ পরিবর্তিত হতে পারেনা । এটাই হচ্ছে মহা সাফল্য (৬৪) (সূরা ইউনুছ)
উল্লেখিত আয়াতের ব্যখ্যায় হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে-

أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- ্র إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ لأُنَاسًا مَا هُمْ بِأَنْبِيَاءَ وَلاَ شُهَدَاءَ يَغْبِطُهُمُ الأَنْبِيَاءُ وَالشُّهَدَاءُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِمَكَانِهِمْ مِنَ اللَّهِ تَعَالَى গ্ধ. قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تُخْبِرُنَا مَنْ هُمْ. قَالَ ্র هُمْ قَوْمٌ تَحَابُّوا بِرُوحِ اللَّهِ عَلَى غَيْرِ أَرْحَامٍ بَيْنَهُمْ وَلاَ أَمْوَالٍ يَتَعَاطَوْنَهَا فَوَاللَّهِ إِنَّ وُجُوهَهُمْ لَنُورٌ وَإِنَّهُمْ عَلَى نُورٍ لاَ يَخَافُونَ إِذَا خَافَ النَّاسُ وَلاَ يَحْزَنُونَ إِذَا حَزِنَ النَّاسُ গ্ধ. وَقَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ (أَلاَ إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ ).

অর্থাৎ:-হযরত ওমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর এমন কিছু বান্দা রয়েছে যারা নবীও নয় শহীদও নয় , ক্বিয়ামত দিবসে তাঁদের অবস্থান দেখে নবী ও শহীদগণ ঈর্ষা করবেন। সাহাবীগণ বললেন হে আল্লাহর রাসূল! তাদের সম্পর্কে আমাদের বলুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বললেন, তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা কোন প্রকার আত্মীয়তার সম্পর্ক ও সম্পদের বিনিময় ছাড়া আল্লাহর বান্দাদেরকে পরস্পরে ভালবাসেন। আল্লাহর শপথ নিশ্চয়ই তাঁদের চেহারার মধ্যে নূর রয়েছে এবং তাহারাও নূরের মিম্বরের উপরে উপবিষ্ট রয়েছেন। যখন মানুষ ভয় ও দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকবে, তাঁরা তখন ভয় ও দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকবে। (আবি দাউদ, তাফসীরে সাবী দ্র:)

*এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মুফতি নঈম উদ্দীন মুরাদাবাদী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন, আল্লাহর ওলী হচ্ছেন তিনিই, যিনি ফরয ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন এবং আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে রত থাকেন। আর তার অন্তর আল্লাহর নূরের পরিচিতির মধ্যে মগ্ন থাকে। তিনি যখন দেখেন, তখন আল্লাহর খুদরতের প্রমানাদি দেখেন। যখন শুনেন তখন আল্লাহর আয়াতগুলোই শুনেন, আর যখন বলেন তখন আপন প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারেই বলেন। যখন নড়াচড়া করেন তখন আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যেই নড়াচড়া করেন এবং যখন চেষ্টা করেন তখন এমন বিষয়ই প্রচেষ্টা চালান যা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। আল্লাহর স্মরণে ক্লান্ত হন না। আর অন্তর চক্ষু দ্বারা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে দেখেন না। এ গুনাবলী আউলিয়া কেরামগনেরই। বান্দা যখন এমন অবস্থায় পৌঁছে তখন আল্লাহই তার অভিভাবক, সাহায্যকারী এবং সহায়তাকারী হন। ( তাফসীরে খাযায়িনুল ইরফান)

৭. পবিত্র হাদিস শরীফের আলোকে ওলীগণের মর্যাদা- ক.পবিত্র হাদিস শরীফে এসেছে

نْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِذَا أَحَبَّ اللَّهُ العَبْدَ نَادَى جِبْرِيلَ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلاَنًا فَأَحْبِبْهُ، فَيُحِبُّهُ جِبْرِيلُ، فَيُنَادِي جِبْرِيلُ فِي أَهْلِ السَّمَاءِ: إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ فُلاَنًا فَأَحِبُّوهُ، فَيُحِبُّهُ أَهْلُ السَّمَاءِ، ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ القَبُولُ فِي الأَرْضِ “
অর্থাৎ:- হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন তখন জিব্রাঈলকে ডেকে বলেন আমি অমুক বান্দাকে ভালবাসি তুমিও তাকে ভালবাস। অত:পর জিব্রাঈল তাকে ভালবাসেন এবং আকাশে ঘোষনা করে দেন যে, আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন তোমরাও তাকে ভালবাস। আকাশবাসীগণও তাকে ভালবাসতে শুরু করেন। অত:পর জমিনের মধ্যে তার গ্রহনযোগ্যতা তৈরি করে দেয়া হয়। (বুখারী ১ম খন্ড ৪৫৬ পৃ:)

খ.অপর হাদিসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللَّهَ قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ، وَلَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحْبَبْتُهُ، فَكُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ ، تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ المُؤْمِنِ، يَكْرَهُ المَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ “
অর্থাৎ:- হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সাথে শত্রæতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দেই। আমার বান্দাগণ শুধু ফরয কাজসমূহ পালন করার মাধ্যমে আমার এতটা নৈকট্য অর্জন করেন না যা আমার নিকট অধিক প্রিয়, বরং আমার বান্দা সর্বদা ফরয আদায়ের পর অধিক হারে নফল ইবাদত সমূহ আদায় করার মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করে থাকে। এভাবে আমি তাকে আমার প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই। আর যখন তাকে মাহবুব বানিয়ে নিই তখন আমি তার কান হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে শুনে। তাঁর চোখ হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে দেখ্ েতাঁর হাত হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে ধরে এবং তাঁর পা হয়ে যাই যার মাধ্যমে সে চলে। যখন সে আমার নিকট কিছু চায় তখন অবশ্যই আমি তা প্রদান করি। যখন সে আমার কাছে আশ্রয় চায়, আমি তাঁকে আশ্রয় প্রদান করি। আমি কোন কাজ করতে কখনো সংশয় করি না। আমার সংশয় মুমিনের আত্মার অবস্থা নিয়ে। কেননা সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে। তবে আমি তার হায়াতে থাকাকে অপছন্দ করি। (কারণ মৃত্যুর পরই বান্দা স্থায়ী নিয়ামতের সন্ধান পায়) ( বুখারী ২য় খন্ড ৯৬৩ পৃ:)

গ.হাদিসে কুদসীর মধ্যে এসেছে-
روى عَمْرو بن الجموح رَضِي الله عَنهُ أَنه سمع رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم يَقُول قَالَ الله تَعَالَى إِن أوليائي من عبَادي وأحبائي من خلقي الَّذين يذكرُونَ بذكري وأذكر بذكرهم
অর্থাৎ-হযরত আমর ইবনে জুমুহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন, আল্লাহ বলেন- নিশ্চয়ই আমার বান্দাদের থেকে আমার কিছু ওলী রয়েছে এবং তারা সৃষ্টির সবচেয়ে প্রিয়, তারা সবসময় আমাকে স্মরন করে, আর আমিও তাঁদেরকে স্মরন করি। (নাওয়াদিরুল উসূল, ইমাম হাকিম তিরমিজী, বাবু ফী আলামাতে আউলিয়িল্লাহ )

৮. ওলীগণ আলেম হন:- যিনি ওলী হবেন তিনি আলেম হবেন। এ প্রসঙ্গে ইমামে আহলে সুন্নাত, আলা হযরত শাহ আহমাদ রেজা খান ফাদ্বেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-
اللہ نے کبھی کس‍ی جاہل کو اپنا ولی نہ بنایا – یعنی بنانا چاہا تو پہلے اسے علم دے دیا- اس کے بعد ولی کیا کہ جو علم ظاہر نہیں رکھتا علم باطن کہ اس کا ثمرہ ونتیجہ ہے کیونکر پاسکتا ہے؟

অর্থাৎ-আল্লাহ তা’য়ালা কোন জাহেল বা মূর্খ ব্যক্তিকে ওলী বানাননি, যদি তিনি কাউকে বেলায়েত দান করতে চান তবে প্রথমে তাঁকে জ্ঞান দান করেন। এরপর বেলায়েতের মর্যাদা দান করেন। কারণ যে ইলমে জাহিরের অধিকারী হয় না, সে ইলমে বাতিন কিভাবে অর্জন করতে পারে? যা ইলমে জাহিরেরই প্রতিফল। (ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়া ২১ খন্ড ৫৩০ পৃ:)
আল্লাহর ওলীগণ কেবলমাত্র আলেম হোন না তাঁরা আলেম তৈরির মারকাযও (কেন্দ্র) বানিয়ে থাকেন। যেমন হযরত ক্বেবলাহ শাহ আহসানুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ১৮৭১ খৃষ্টাব্দে এ দেশে সর্বপ্রথম ইলমে দ্বীন চর্চার ভিত্তি স্থাপন করেন। যা দারুল উলূম হাম্মাদিয়া নামে ঢাকার বংশাল এলাকায় অবস্থিত ছিল। ১৯৬১ ইং সনে পূর্ব পাকিস্তান মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অনুমতিক্রমে উক্ত নাম পরিবর্তন করে দারুল উলূম আহসানিয়া করা হয়। বর্তমানে মাদরাসাটি রাজধানী ঢাকার বুকে ইসলামের বিশুদ্ধ আক্বীদার আলোকে অত্যান্ত সফলতার সাথে দ্বীনি খেদমত পরিচালনা করছে।

৯.ওলীগণের ওসীলায় আল্লাহর রহমত:- মহান আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন-

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ(سورة الزمر-৫৩)
অর্থাৎ:-হে রাসূল! আপনি বলুন, হে আমার বান্দারা যারা নিজেদের আত্মার উপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হইও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করবেন, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু ( সূরা যুমার,আয়াত-৫৩)

অপর আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলে দিয়েছেন-
وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا إِنَّ رَحْمَتَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْمُحْسِنِينَ (سورة الأعراف-৫৬)
অর্থাৎ:-তোমরা সংশোধন হওয়ার পর জমিনে বিশৃংখলা সৃষ্টি করো না। আর তাঁকে ভয় ও রহমত প্রাপ্তির আশায় ডাক, নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীল অর্থ্যাৎ ওলীগণের অতি নিকটে। (সূরা আ’রাফ, আয়াত-৫৬)

১০. ওলীগণের ওসিলায় বালা মসিবত দূর হয়:- ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বি: হতে বর্ণনা করেন-
وأخرج ابن عساكر عن عبد الله بن مسعود مرفوعا ্রأن الله تعالى خلق ثلاثمائة نفس قلوبهم على قلب آدم، وله أربعون قلوبهم على قلب موسى، وله سبعة قلوبهم على قلب إبراهيم، وله خمسة قلوبهم على قلب جبريل، وله ثلاث قلوبهم على قلب ميكائيل، وله واحد قلبه على قلب إسرافيل، كلما مات الواحد أبدل الله مكانه من الثلاثة، وكلما مات واحد من الثلاثة أبدل الله مكانه من الخمسة، وكلما مات من الخمسة واحد أبدل الله مكانه من السبعة، وكلما مات واحد من السبعة أبدل الله مكانه من الأربعين، وكلما مات واحد من الأربعين أبدل الله مكانه من الثلاثمائة، وكلما مات واحد من الثلاثمائة أبدل الله مكانه من العامة بهم يدفع البلاء عن هذه الأمةগ্ধ

অর্থাৎ- হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. নবীজি থেকে বর্ণনা করেন যে,নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা আউলিয়া কেরামগণ থেকে তিনশত জনকে সৃষ্টি করেছেন যাদের সম্পর্ক হযরত আদম আ. এর ক্বলবের সাথে, চল্লিশজনের ক্বলবের সম্পর্ক হলো হযরত মূসা আ. এর ক্বলবের সাথে, সাত জনের ক্বলবের সম্পর্ক হলো হযরত ইব্রহীম আ. এর ক্বলবের সাথে,পাচঁ জনের ক্বলবের সম্পর্ক হলো হযরত জিব্রাঈল আ. এর ক্বলবের সাথে, তিনজনের ক্বলবের সম্পর্ক হলো হযরত মিকাঈল আ. এর ক্বলবের সাথে, আর এক জনের ক্বলবের সম্পর্ক হলো হযরত ই¯্রাফীল আ. এর সাথে। যখন একজনের মৃত্যু হয়, আল্লাহ তা’য়ালা তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে স্থলাভিষিক্ত করেন, আর যখন তিনজনের মধ্য থেকে কারও মৃত্যু হয় পাচঁজন থেকে একজনকে স্থলাভিষিক্ত করেন, আর যখন পাচঁ জন থেকে কোন একজনের মৃত্যু হয় সাতজন থেকে একজনকে স্থলাভিষিক্ত করেন, আর সাতজন থেকে একজনের মৃত্যু হয় তখন চল্লিশজন থেকে একজনকে স্থলাভিষিক্ত করেন, আর যখন চল্লিশজন থেকে কোন একজনের মৃত্যু হয় তখন তিনশতজন থেকে একজনকে স্থলাভিষিক্ত করেন, আর যখন তিনশতজন থেকে একজনের মৃত্যু হয় তখন নতুন করে একজনকে উল্লেখিত স্থানে মনোনীত করেন। আর আল্লাহ তায়ালা এসকল আউলিয়া কেরামগণের ওসীলায় এ উম্মত থেকে বালা মসিবত দূর করেন। (মিরকাত)

১১.ওলীগণের মাজার শরীফ দোয়া কবুলের স্থান । ক্ববর ও মাজার জিয়ারত করা সুন্নাতে রাসূল :- এ মর্মে ইমাম শাফেয়ী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-

قَبْرُ مُوْسى الكَاظِم ترياق مجرب لاجابة الدعاء-
অর্থাৎ-হযরত মু’সা কাজেম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ক্ববর শরীফ হলো দোয়া ক্ববুলের পরীক্ষিত উসিলা। ( মিশকাত ১৫৪ পৃ: ২ নং হাশিয়া দ্র:)
আরও উল্লেখ্য যে, হযরত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক বছর একবার উহুদের ময়দানে সমাহিত শহীদদের জিয়ারতে যেতেন। সুতরাং প্রমানিত হলো ক্ববর জিয়ারত করা সুন্নাত।

১২.আউলিয়া কেরামগণের মাযার শরীফের উপর ছাদ বা গম্বুজ তৈরী বৈধ:- উলামায়ে কিরামগণ মাযার শরীফের উপর ছাদ বা গম্বুজ নির্মান করা বৈধতার উপর ফাতাওয়া দিয়েছেন, নি¤েœ সংক্ষিপ্ত কয়েকটি প্রমান উল্লেখ করা হলো-

১.জামিউল ফাতাওয়া হতে আহকাম কিতাবে বর্ণিত আছে-
وَفِي الْأَحْكَامِ عَنْ جَامِعِ الْفَتَاوَى: وَقِيلَ لَا يُكْرَهُ الْبِنَاءُ إذَا كَانَ الْمَيِّتُ مِنْ الْمَشَايِخِ وَالْعُلَمَاءِ وَالسَّادَاتِ –

অর্থাৎ-মৃতব্যক্তি যদি পীর মাশায়িখ, আলেম এবং সম্মানি হয় তাহলে তার কবরের উপর গম্বুজ তৈরি করা মাকরুহ নয়। )ফাতাওয়া শামী (

২. তাফসীরে রুহুল বায়ানে উল্লেখ আছে-
فبناء القباب على قبور العلماء والأولياء والصلحاء ووضع الستور والعمائم والثياب على قبورهم امر جائز إذا كان القصد بذلك التعظيم فى أعين العامة حتى لا يحتقروا صاحب هذا القبر
অর্থাৎ-আলেম, আউলিয়া, নেককারগণের কবরের উপর গম্বুজ তৈরি করা, গিলাফ চড়ানো, পাগড়ী রাখা ও শামিয়ানা টানানো জায়েয কাজ। যদি এর দ্বারা জনগনের দৃষ্টিতে সম্মান উদ্দেশ্য হয় এবং মানুষ যাতে ঐ ব্যক্তিকে হীন মনে না করে। (তাফসীরে রুহুল বায়ান সূরা তাওবা দ্র:)

১৩. আউলিয়াগণের মাজার শরীফে ফুল ছড়ানোর বৈধতা:- ১.বিখ্যাত কিতাব ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে এসেছে-
وَضْعُ الْوُرُودِ وَالرَّيَاحِينِ على الْقُبُورِ حَسَنٌ وَإِنْ تَصَدَّقَ بِقِيمَةِ الْوَرْدِ كان أَحْسَنَ كَذَا في الْغَرَائِبِ-
অর্থাৎ-কবরের উপর গোলাপ বা সুঘ্রানযুক্ত ফুল দেয়া উত্তম। আর যদি সমপরিমান মূল্য দান করা হয় তা আরও উত্তম হবে। (হিন্দিয়া ৫ম খন্ড ৪০৬ পৃ:)
২.মিরকাত কিতাবে এসেছে-
وقد أفتى بعض الأئمة من متأخري أصحابنا بأن ما اعتيد من وضع الريحان والجريد سنة-
অর্থাৎ- হানাফী মাযহাবের ওলামায়ে মোতাআখখিরিনদের কোন কোন আলেম এ মর্মে ফাতওয়া দিয়েছেন যে, কবরের উপর সুগন্ধি ফুল, খেজুরের শাখা দেয়া সুন্নাত। (হাশিয়াতুত তাহতাভী আলা মারাক্বিলীল ফালাহ ৬২৪ পৃ:)
৩.মাওলানা আব্দুল হাই লাখœৗভী রা. বলেছেন-
سبزپتے پھول وغیرہ قبور پر چڑھا نا مستحب ہے-
অর্থাৎ-কবরের উপর সবুজ লতা-পাতা, ফুল দেয়া মুস্তাহাব। ( মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া ২৫৫পৃ:)

উপসংহার:-পরিশেষে বলা যায় যে, প্রত্যেক ক্ষমতাধর মানুষের কাছের মানুষেরও অনেক ক্ষমতা থাকে। আর মহান অলিগণ হলেন রাব¦ুল আলামিনের কাছের মানুষ। তাই তাদের ক্ষমতাও অপরসীম। তাই আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যানের জন্য তাদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করা আমাদের স্বার্থেই জরুরী। মহান আল্লাহ আমাদেরকে আউলিয়া কেরাগণের ওসিলায় মহান আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত ও রহমত-বরকত হাসিল করার তৌফিক দান করুন । আমীন বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালীন।

অধ্যক্ষ মুফতি কাজী আবু জাফর মোহাম্মাদ হেলাল উদ্দীন
অধ্যক্ষ,দারুল উলূম আহসানিয়া কামিল মাদরাসা


Comments

3 responses to “আউলিয়ায়ে কেরামের ওসিলায় আল্লাহর রহমত”

  1. মাশাআল্লাহ

  2. junaer Avatar

    মাশাআল্লাহ

  3. মাশাআল্লাহ

Leave a Reply to admin Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *